মহাবিশ্বে নতুন বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন প্রাণের খোঁজেই হোক আর আবাস সম্প্রসারণের জন্যই হোক; গ্রহান্তরের নেশাটা মানুষের অনেক আগে থেকেই। এই নেশাটা এখন আপাতত স্বপ্নের পর্যায়ে থাকলেও বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থীরা সেই স্বপ্নের ঘোড়াটাকে দুর্দান্ত গতিতে ছুটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রোবটিক্স প্রতিযোগিতায় ইতোমধ্যে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। মঙ্গল গ্রহে পাঠানোর উদ্দেশ্যে নিজেদের তৈরি করা রোবট নিয়ে বিস্ময়কর সাফল্য নিয়ে এসেছে বাংলাদেশের জন্য। চলেন জেনে নেই।
রোবট মঙ্গলতরী
মঙ্গল গ্রহে ঘুরে বেড়ানোর জন্য ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তৈরি নতুন প্রজন্মের রোবট যান মঙ্গলতরী। রোবটিক্স প্রোজেক্টটির কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালে ১১ জন শিক্ষার্থীর হাত ধরে। বর্তমানে এই সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ৪০-এ, যারা ৯টি গ্রুপে ভাগ হয়ে প্রোজেক্টটির বিভিন্ন বিভাগে কাজ করছেন।
আরও পড়ুন: সুবর্ণ আইজাক বারী: বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ অধ্যাপক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ‘বিস্ময় বালক’
টিম মঙ্গলতরীকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সুহাইল হক রাফি। ইলেকট্রনিক্স টিমের প্রধান মাহবুবুল হক, অটোনোমাস, কন্ট্রোল অ্যান্ড সায়েন্স দলনেতা সুহাইল হক রাফি ও ডিজাইন অ্যান্ড মেকানিক্যাল দলনেতা শামস ফেরদৌস অর্ণব। নেটওয়ার্ক অ্যান্ড ভিশননের দায়িত্ব পালন করছেন সাদ নূর মিম বিধু। রিসার্চ অ্যান্ড ডকুমেন্টেশনের দিকটি দেখাশোনা করছেন বৃষ্টি দাস। মুরছালিন আহমেদ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ফাইন্যান্সের দায়িত্বে আছেন।
২০১৫ থেকে প্রতি বছর আপডেট হওয়া মঙ্গলতরীর এবারের ভার্সনে যুক্ত হচ্ছে হারানো বস্তু পুনরুদ্ধার, দৃষ্টিগোচর যে কোন কিছু রেকর্ড করা, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সহায়তায় সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিচরণ করা বৈশিষ্ট্য।
আরও পড়ুন: ফোর্বসের ‘থার্টি আন্ডার থার্টি’তে বাংলাদেশের প্রকৌশলী বাশিমা
প্রতিবারের মত এবারও মঙ্গলতরী অংশ নিতে যাচ্ছে ইউআরসি (ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ)তে। এটি মঙ্গলে পাঠানোর জন্য তৈরি প্রোটোটাইপ রোবটের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা। এখানে সারা বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা হাজির হন নিজেদের নকশা করা মঙ্গল যান নিয়ে। মঙ্গলতরী ২০১৬ সাল থেকেই এখানে অংশ নিয়ে আসছে। এবারের আসর বসবে আগামী জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহ্র এমডিআরএস (মার্স ডেসার্ট রিসার্চ স্টেশন)-এ। সবচেয়ে গর্বের বিষয় হচ্ছে, গত দুই বছর ধরে এই প্রতিযোগিতায় টিম মঙ্গলতরীর প্রাপ্ত নাম্বার ৯০-এর ওপর। ২০২০ সালে ৯৩টি দলের মধ্যে তৃতীয় স্থানে ছিল মঙ্গলতরী টিম। অবশ্য করোনা মহামারির কারণে ইভেন্টটি শেষমেশ ফাইনালের মুখ দেখতে পারেনি।
এ বছর আরও একটি রোবট প্রতিযোগিতা আইআরসি (ইন্টারন্যাশনাল রোভার চ্যালেঞ্জ)-এ অংশ নিবে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির এই দলটি। আগামী মার্চ-এ ভারতের চেন্নাইয়ের ভিআইটি(ভেলোর ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি)তে শুরু হবে এ প্রতিযোগিতা।
আরও পড়ুন: পুরনো স্মার্টফোনের আয়ু বাড়ানোর ৫টি টিপস
ড্রোন নির্ভীক
নির্ভীক মঙ্গলগ্রহে ভ্রমণের জন্য বুয়েট (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়)-এর শিক্ষার্থীদের নির্মিত একটি ড্রোন। এর সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীরা হলেন তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক্স কৌশল বিভাগের খন্দকার শিহাবুল হক, মো. রাসুল খান, ও কুশল রায়; যন্ত্রকৌশল বিভাগের নাফিজ ইমতিয়াজ, নাজীব চৌধুরী, রাফি বিন দস্তগীর, অপূর্ব সরকার, স্বরূপ চন্দ, মিসফাকুর রহমান, মো. আমিন হক, সৈয়দ তাওসিফ ইসলাম, ইন্তেসার জাওয়াদ জায়গীরদার, অজয় কুমার সরকার, ইয়ামিনুল হক, ফারসিয়া কাওসার চৌধুরী, ইমন রায়, আর কে বি এম রিজমি, এম আবরার মুহিত ও বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এস এম সাকিফ সানি।
নির্ভীক ড্রোনটি নিয়ে কাজের সময় মঙ্গলগ্রহের বাতাসের চাপ, আদ্রতা, অভিকর্ষের মান নিয়ে সুক্ষ্ম গবেষণা করা হয়েছে। পুরো প্রোজেক্ট শেষ করতে সময় লেগেছে প্রায় দুই মাস।
আরও পড়ুন: গ্যালাক্সি আনপ্যাকড অনুষ্ঠানে গ্যালাক্সি এস২২ আল্ট্রা ও এস২২+ উন্মোচন করল স্যামসাং
নির্ভীক’র বিভিন্ন ধরনের সেন্সরগুলো মঙ্গলগ্রহের বাতাসে থাকা নানান উপাদান যাচাই করে তার ডাটা পাঠাতে পারবে। প্রায়-১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কাজ করতে সক্ষম নির্ভীক।
নির্ভীক’র মূল কাঠামোর নকশা করেছেন রাফি বিন দস্তগীর ও যান্ত্রিক নকশার রূপকার স্বরূপ চন্দ।
আরও পড়ুন: রিয়েলমি ৯ আই: ৩৩ ওয়াট ডার্ট চার্জিং এবং স্ন্যাপড্রাগন ৬৮০ প্রসেসরের সেরা পারফর্মার
২০২১ এর আইপিএএস (ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যানেটারি অ্যারিয়াল সিস্টেম চ্যালেঞ্জ)-এ ইন্টারপ্ল্যানেটার নামে অংশ নেয় বুয়েটের টিমটি। মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ড্রোন তৈরির নিমিত্তে আইপিএএস চ্যালেঞ্জের আয়োজন করে মার্স সোসাইটি সাউথ এশিয়া। প্রতিযোগিতায় বুয়েটের ইন্টারপ্ল্যানেটার অষ্টম স্থান অধিকার করলেও উদ্ভাবনে সর্বসেরা খেতাবটি অর্জন করে নেয় নির্ভীক টিম।
সবশেষে বলা যায় যে একাডেমির গণ্ডি পেরিয়ে মঙ্গলগ্রহে পাঠানোর জন্য এই প্রোটোটাইপগুলোর এখন প্রয়োজন শিল্পায়নে অন্তর্ভুক্ত করা। তবেই এই শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বিশ্বের পেশাদার প্ল্যাটফর্মের নজরে পড়বে। আর এভাবেই লালিত হবে কোন এক বাংলাদেশির নকশায় গড়া রোবটের মঙ্গলগ্রহে পাড়ি জমানোর অপার সম্ভাবনা।
আরও পড়ুন: এলিয়েন কি সত্যি পৃথিবীতে এসেছিল?